রিজিক বাড়ানাের আমল

রিজিক বাড়ানাের আমল
রিজিক
বাড়ানাের আমল

আজ আমরা রিজিক বৃদ্ধির উপায়সমূহের মধ্যে কুরআন হাদীস রােমন্থিত ১৪টি আমল শিখবাে, ইনশাল্লাহ। আরবি অক্ষরে বিভিন্ন হাদিস, মহানবী (সঃ) এর উক্তি, দোয়া এবং তার বাংলা অর্থ দেয়া হয়েছে

১। গুনাহ ত্যাগ করা

( بل تؤثرون الحيوة الأنيا . والأخرة خير

 বরং তােমরা দুনিয়ার জীবনকে প্রাধান্য দিচ্ছ। অথচ আখিরাত সর্বোত্তম স্থায়ী।' {সূরা আল-লা, আয়াত : ১৬-১৭}

২। অভাবের সময় আল্লাহমুখী হওয়া

 আর তােমাদের রব বলেছেন, তােমরা আমাকে ডাক, আমি তােমাদের জন্য সাড়া দেব।' {সূরা আল-মু'মিন, আয়াত : ৬০}

আয়াতে আল্লাহ দু' করার নির্দেশ দিয়েছেন আর তিনি তা কবুলের জিম্মাদারি নিয়েছেন যাবৎ

তা কবুলে পথে কোনাে অন্তরায় না হয়। যেমন ওয়াজিব তরক করা, হারাম কাজে জড়ানাে, হারাম আহার গ্রহণ বা হারাপ পরিচ্ছদ পরা ইত্যাদি এবং কবুলকে খানিক বিলম্বিতকরণ

৩। বিয়ে করা

{ وأنكحوا الأيمن منكم والظلچين من عبادكم

إن يكونوا فقراء ينهم الله من فضله وإما والله وسع عليه ۳۲ ) [النور : ۳۲]

আর তােমরা তােমাদের মধ্যকার অবিবাহিত নারী-পুরুষ সৎকর্মশীল দাস দাসীদের বিবাহ দাও। তারা অভাবী হলে আল্লাহ নিজ অনুগ্রহে তাদেরকে অভাবমুক্ত করে দেবেন। আল্লাহ প্রাচুর্যময় মহাজ্ঞানী।' {সূরা আন-নূর, আয়াত : ৩২}

৪। আল্লাহর নেয়ামতের শুকরিয়া আদায়

{ وإذ تأتي ربكم لئن شكرتم لأزيدنكم ولين گفتم إن عذابي لشیریڈ 7). [ابراهيم: 7]

আর যখন তােমাদের রব ঘােষণা দিলেন, যদি তােমরা শুকরিয়া আদায় কর, তবে আমি অবশ্যই তােমাদের বাড়িয়ে দেব, আর যদি তােমরা অকৃতজ্ঞ হও, নিশ্চয় আমার আযাব বড় কঠিন' {সূরা ইবরাহীম, আয়াত : ০৭}

আল্লাহর পথে জিহাদ

একমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টি হাসিলের জিহাদেও সম্পদের ব্যপ্তি ঘটে। গনীমত বা যুদ্ধলব্ধ সম্পদের মাধ্যমে সংসারে প্রাচুর্য আসে। যেমন ইবন উমর রাদিআল্লাহু আনহু কর্তৃক বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,

 আর আমার রিজিক রাখা হয়েছে আমার বর্শার ছায়াতলে।' [মুসনাদ আহমদ : ৫৬৬৭; বাইহাকী : ১১৫৪; শুআবুল ঈমান : ১৯৭৮৩]

৬। আল্লাহর রাস্তায় হিজরত করা

ومن يهاجر في سبيل الله يجد في الأرض معما گيا وشقة ومن يخرج من بيته. مقاجرا إلى الله ورسوله، ثم يدركه الموت فقد وقع أجرة على الله وكان الله غفورا رحيما ۱۰۰ } [النساء :

আর যে আল্লাহর রাস্তায় হিজরত করবে, সে যমীনেবহু আশ্রয়ের জায়গা সচ্ছলতা পাবে আর যে আল্লাহ তাঁর রাসূলের উদ্দেশ্যে মুহাজির হয়ে নিজ ঘর থেকে বের হয় তারপর তাকে মৃত্যু পেয়ে বসে, তাহলে তার প্রতিদান আল্লাহর উপর অবধারিত হয় আর আল্লাহ ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু' {সূরা আন-নিসা, আয়াত : ১০০}

৭। ইবাদতের জন্য ঝাটমুক্ত হওয়া

إن الله تعالى يقول يا ابن آدم تفرغ لعبادتي أملأ صدرك غئى وأشد فقرك وإلا تفعل الأث يديك شغلا ولم أشد فقرك »

আল্লাহ তা'আলা বলেন, হে আদম সন্তান, আমার ইবাদতের জন্য তুমি ঝামেলামুক্ত হও, আমি তােমার অন্তরকে প্রাচুর্য দিয়ে ভরে দেব এবং তােমার দারিদ্র ঘুচিয়ে দেব। আর যদি তা না কর, তবে তােমার হাত ব্যস্ততায় ভরে দেব এবং তােমার অভাব দূর করব না।' [তিরমিযী : ২৬৫৪; মুসনাদ আহমদ : ৮৬৮১; ইবন মাজা : ৪১০৭]

৮। দুর্বলের প্রতি সদয় হওয়া

মুসআব ইবন সা' রাদিআল্লাহু আনহু যুদ্ধজয়ের পর মনে মনে কল্পনা করলেন, তিনি বােধ হয় তাঁর বীরত্ব শৌর্য-বীর্য হেতু অন্যদের চেয়ে নিজেকেবেশি মর্যাদাবান সেই প্রেক্ষিত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন,

 তােমাদের মধ্যে থাকা দুর্বলদের কারণে কেবল তােমাদের সাহায্য করা হয় এবং রিজিক প্রদান করা হয়।' [বুখারী : ২৮৯৬]

৯। দরূদ পড়া

كم قلت يا رسول الله إلى أكثر الصلاة عليك أجعل لك من صلاتي فقال « ما شئت ». قال قلت التربة. قال « ما شئت فإن زدت فهو خير لك ». قلت الضف. قال « ما شئت فإن زدت فهو خير لك ». قال قلت قاللتين. قال « ما شئت فإن زدت فهو خير لك ». قلت أجعل لك صلاټی كلها. قال « إذا كفى همك ويغفر لك نبك » قال أبو عيسى هذا حديث حسن.

আমি জিজ্ঞেস করলাম, হে আল্লাহর রাসূল, আমি আপনার প্রতি অধিকহারে দরূদ পড়তে চাই, অতএব আমার দু'আর মধ্যে আপনার দরূদের জন্য কতটুকু অংশ রাখব? তিনি বললেন, তুমি যতটুকু চাও। কা' বলেন, আমি বললাম, এক চতুর্থাংশ। তিনি বললেন, তুমি যতটুকু চাও। তবেযদি তুমি বেশি পড় তা তােমার জন্য উত্তম হবে।। আমি বললাম, অর্ধেক? তিনি বললেন, তুমি যতটুকু চাও তবে তুমি যদি বেশি পড় তা তােমার জন্য উত্তম হবে কা' বলেন, আমি বললাম, তাহলে দুই তৃতীয়াংশ? তিনি বললেন, তুমি যতটুকু চাও তবে তুমি যদি বেশি পড় তা তােমার জন্য উত্তম হবে আমি বললাম, আমার দু'আর পুরােটা জুড়েই শুধু আপনার দরূদ রাখব তিনি বললেন, তাহলে তা তােমার ঝামেলা প্রয়ােজনের জন্য যথেষ্ট হবে এবং তােমার গুনাহ ক্ষমা করা হবে [তিরমিযী : ২৬৪৫; হাকেম, মুস্তাদরাক : ৭৬৭৭ (আবু ঈসা বলেন, হাদীসটি হাসানসহীহ)]

১০। আত্মীয়দের সঙ্গে সুসম্পর্ক রাখা

আত্মীয়দের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রাখা এবং তাদের হক আদায়ের মাধ্যমেও রিজিক বাড়ে। যেমন : আনাস ইবন মালেক রাদিআল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি তিনি ইরশাদ করেন,

« من سره أن يبسط له في رزقه أو ينسأ له في أثري فليصل رقه»

যে ব্যক্তি কামনা করে তার রিজিক প্রশস্ত করে দেওয়া হােক এবং তার আয়ু দীর্ঘ করা হােকসে যেন তার আত্মীয়দের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রাখে' [বুখারী : ৫৯৮৫; মুসলিম : ৪৬৩৯]

১১। বারবার হজ-উমরা করা

« تابعوا بين الحج والعمرة فإنهما ينفيان الفقر والثوب كما ينفي الكير خبث الحديد والهب والفتنة وليس للحج المبرورة تواب إلا الجنه »

তােমরা হজ উমরা পরপর করতে থাক, কেননা তা অভাব গুনাহ দূর করে দেয়, যেমন দূর করে দেয় কামারের হাপর লােহা, সােনা রুপার ময়লাকে।' [তিরমিযী : ৮১৫; নাসাঈ : ২৬৩১]

১২। আল্লাহর রাস্তায় ব্যয় করা

{ قل إن ربي يبشظ الرق لمن يشاء من عباء ويقر له وما أنفقتم من شيء فهو يخلفه وهو خير الرزقين ۳۹ } [سبا: ۳۹]

বল, নিশ্চয় আমার রব তাঁর বান্দাদের মধ্যে যার জন্য ইচ্ছা রিযক প্রশস্ত করেন এবং সঙ্কুচিত করেন। আর তােমরা যা কিছু আল্লাহর জন্য ব্যয় কর তিনি তার বিনিময় দেবেন এবং তিনিই উত্তম। রিযকদাতা।' {সূরা আস-সাবা’, আয়াত : ৩৯}

১৩ তাকওয়া তাওয়াক্কুল অবলম্বন

{ ومن يتق الله يجعل له مخرجا ۲ ويؤرقه من حيث لا يحتسب ومن يتوكل على الله فهو خشبه إن الله بلغ أمره قد جعل الله إكل شيء قدرا ۳ }. [الطلاق : ۲، ۳]

আর যে আল্লাহকে ভয় করে, তিনি তার জন্য উত্তরণের পথ তৈরী করে দেন। এবং তিনি তাকে এমন উৎস থেকে রিযক দিবেন যা সে কল্পনাও করতে পারবে না। আর যে আল্লাহর ওপর তাওয়াক্কুল করে আল্লাহ তার জন্য যথেষ্ট। আল্লাহ তাঁর উদ্দেশ্য পূর্ণ করবেনই। নিশ্চয় আল্লাহ প্রত্যেক জিনিসের জন্য একটি সময়সীমা নির্ধারণ করে দিয়েছেন।' {সূরা আত-তালাক, আয়াত : -}

অর্থাৎ যে আল্লাহকে ভয় করবে এবং আনুগত্য দেখাবে, আল্লাহ তার সকল সংকট দূর করে দেবেন। এবং তার কল্পনাতীত স্থান থেকে রিজিকের সংস্থান করে দেবেন। আর যে কেউ তার উদ্দেশ্য হাসিলে একমাত্র আল্লাহর শরণাপন্ন হয় তিনিই তার জন্য যথেষ্ট হয়ে যান। বলাবাহুল্য এই তাকওয়ার পরিচয় মেলে হালাল উপার্জনে চেষ্টা এবং সন্দেহযুক্ত কামাই বর্জনের মধ্য দিয়ে

১৪। তাওবা ইস্তেগফার করা

فقلت أستغفروا ربكم إنه گان عقارا ۱۰ ژيل الماء عليكم مدرارا ۱۱ ويمدكم بأمول وبنين ويجعل لكم جت ويجعل لكم أنا ۱۲ ). [نوح:

۳۱۲ ،۱۰

আর বলেছি, তােমাদের রবের কাছে ক্ষমা চাও; নিশ্চয় তিনি পরম ক্ষমাশীল। (তাঁর কাছে ক্ষমা চাইলে) তিনি তােমাদের উপর মুষলধারে বৃষ্টি বর্ষণ করবেন, আর তােমাদেরকে ধন-সম্পদ সন্তানসন্ততি দিয়ে সাহায্য করবেন এবং তােমাদের জন্য বাগ-বাগিচা দেবেন আর দেবেন নদী-নালা' {সূরা নূহ, আয়াত : ১০-১২}

হাদীসে বিষয়টি আরেকটু খােলাসা করে বলা হয়েছে, আবদুল্লাহ ইবন আব্বাস রাদিআল্লাহু আনহু কর্তৃক বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,

« من لزم الإستغقار جعل الله له من كل ضيق مخرجا ومن كل هم فرجا ورزقه من حيث لا

 যে ব্যক্তি নিয়মিত ইস্তেগফার করবে আল্লাহ তার সব সংকট থেকে উত্তরণের পথ বের করে দেবেন, সব দুশ্চিন্তা মিটিয়ে দেবেন এবং অকল্পনীয় উৎস। থেকে তার রিজিকের সংস্থান করে দেবেন।” (আবু দাউদ)

আরও পড়ুন, সালাতে মনােযােগী হবার কটা টিপস


 

 

 

 

0 Comments:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন