প্রতিদিন পালনীয় কিছু আমল: যা ঈমান ও আমলের হিসাব সহজ করবে।

 
প্রতিদিন পালনীয় কিছু আমল: যা ঈমান ও আমলের হিসাব সহজ করবে।

প্রতিদিন পালনীয় কিছু আমল: যা ঈমান ও আমলের হিসাব সহজ করবে। 


১। ফরজ নামায (৫ ওয়াক্ত) আউয়াল ওয়াক্তে পড়ার চেষ্টা করতে হবে।আর কিচ্ছু না করলেও ফরজ নামায বাদ দেয়ার কোনো সুযোগই নেই।

২। সুন্নাত নামায (দিনে ১২ রাকাআত)ফজরে ২, যোহরে ৪+২, মাগরিবে ২ ও এশায় ২, মোট ১২ রাকাআত। ফজরের ২ রাকাত সুন্নাত খুবই গুরুত্বপূর্ণ। নিয়মিত এই ১২ রাকাআত সুন্নাত নামায আদায়কারীর জন্য জান্নাতে ঘর নির্মাণ করা হবে। [সহিহ মুসলিম: ১৫৭৯-৮০]

৩। তাহাজ্জুদ নামায।তাহাজ্জুদ দুয়া কবুলের শ্রেষ্ঠ সময়। এ সময় আল্লাহ প্রথম আসমানে নেমে আসেন। [সহিহ বুখারী ১১৪৫]মিনিমাম ২ রাকাত হলেও পড়ার চেষ্টা করতে হবে।

৪। ফরজ নামাযের পর আয়াতুল কুরসী পড়া।রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, "যে ব্যক্তি প্রত্যেক ফরজ নামাজ শেষে আয়াতুল কুরসি পড়ে, তার জান্নাতে প্রবেশ করতে মৃত্যু ছাড়া আর কোনো বাধা থাকে না।"[নাসাঈ ৯৯২৮] সুবহানআল্লাহ!

৫। নিয়মিত কুরআন তিলাওয়াত করা। নিয়মিত কুরআন পাঠ কিয়ামতের দিন নূর স্বরূপ হয়ে দাঁড়াবে। অর্থ সহ পড়ার চেষ্টা করতে হবে।

৬। রাতে সুরা বাকারার শেষ দুই আয়াত পড়া।রাসুলুলাহ ﷺ বলেছেন, "যে ব্যক্তি রাতের বেলা সুরা বাকারার শেষ দুই আয়াত পড়বে সেটা তার জন্য যথেষ্ঠ হবে।" [বুখারি:৫০১০, মুসলিম:৮০৭]

৭। ওযু করার পরে কালেমা শাহাদাত পড়া।রাসুল ﷺ বলেছেন, "যে ব্যক্তি উত্তমরূপে অযু করার পর 'আশহাদু আন লা ইলা-হা ইল্লাল্লাহু ওয়াহদাহু লা শারী-কা লাহু ওয়া আশহাদু আন্না মুহাম্মাদান 'আবদুহু ওয়া রাসূলুহু' বলবে, তার জন্য জান্নাতের আটটি দরজাই খুলে দেওয়া হবে। সে যে দরজা দিয়ে ইচ্ছা প্রবেশ করতে পারবে।" [সহিহ মুসলিম: ১২২]

৮। তাহিয়াতুল ওযু।রাসুল ﷺ বলেছেন, "যে মুসলমান সুন্দররুপে অজু করে তারপর দাঁড়িয়ে দেহ ও মনকে পুরোপুরি তার প্রতি নিবদ্ধ রেখে দুই রাকাআত নামাজ আদায় করে, তার জন্য জান্নাত ওয়াজিব হয়ে যায়।" [সহিহ মুসলিম:২৩৪]
ওযুর পরে দুই রাকাত নফল নামাযের এতই সাওয়াব!

৯। সাইয়্যেদুল ইসতিগফার পড়া।রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেন, "যে ব্যক্তি দৃঢ় বিশ্বাসের সাথে এই দুআ পাঠ করবে, দিনে পাঠ করে রাতে মারা গেলে কিংবা রাতে পাঠ করে দিনে মারা গেলে, সে জান্নাতী হবে।" [মিশকাত ২৩৩৫]
দিনে দুইবার পড়তে হয়, সকাল ও সন্ধ্যায়।

১০। সুরা মুলক পড়া। (রাতে ঘুমানোর আগে)রাসুলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, "কোরআন শরীফে ৩০ আয়াত বিশিষ্ট একটি সূরা আছে, যা তার তেলাওয়াতকারীকে ক্ষমা করে না দেয়া পর্যন্ত তার জন্য সুপারিশ করতেই থাকবে।" [আবু দাউদ ১৪০২, তিরমিজি ২৮৯১]
সুরাটি হলো সুরা মূলক, যেটা রাসূল ﷺ ঘুমানোর আগে কখনোই বাদ দিতেন না।

১১। দরুদ পাঠ করা।রাসুল ﷺ বলেছেন, "যে ব্যক্তি আমার প্রতি একবার দরূদ পাঠ করে, আল্লাহ তার প্রতি দশবার রহমত নাযিল করেন এবং তার দশটি গোনাহ (সগীরা) মাফ করা হয় ও তার দশটি মর্যাদা বৃদ্ধি করা হয়।" [নাসাঈ]দরুদে ইব্রাহীম পড়তে পারেন। অথবা সবচেয়ে সংক্ষিপ্ত দরুদ "সল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম" এটুক পড়লেও একবার দরুদ পড়ার সাওয়াব পাবেন।
(শুক্রবার বেশি বেশি করে পড়া।)

১২। ইস্তিগফার।নিয়মিত ইস্তিগফারে দুয়া কবুল বেশি হয়, অনেক গুনাহ মাফ হয়, আল্লাহর শাস্তি ও বিপদ থেকে মুক্তি পাওয়া যায়, রিযিক প্রশস্ত হয়।দিনে অন্তত ৭০ বার 'আস্তাগফিরুল্লাহ' পড়া।

১৩। 'সুবহান আল্লাহ', 'আলহামদুলিল্লাহ', 'আল্লাহু আকবর'।প্রতি ফরজ নামাযের পর তিনটি যিকির ৩৩ বার অথবা ১০ বার করে পড়তে হবে। দুইটাই হাদিসে এসেছে। ৩৩ বা ১০ যেটাই হোক, নিয়মিত আমল করতে হবে।

১৪। দিনে ১০০ বার 'সুবহানাল্লাহি ওয়া বিহামদিহি' পড়া।যে ব্যক্তি প্রতিদিন 'সুবহানাল্লাহি ওয়া বিহামদিহি' ১০০ বার পাঠ করবে সমুদ্রের ফেনা পরিমান (সগীরা) গুনাহ থাকলেও তাকে মাফ করে দেওয়া হবে। [সহিহ বুখারী ১৬৮, মুসলিম ২০৭১]

১৫। নিয়মিত তিন কূল পড়া।রাসূলুল্লাহ ﷺ প্রতি রাতে যখন ঘুমাতে যেতেন, তখন নিজের উভয় হাত এক সঙ্গে মিলাতেন। তারপর উভয় হাতে ফুঁক দিতেন এবং সূরা ইখলাস, সূরা ফালাক, সূরা নাস পড়তেন। তারপর দেহের যতটুকু অংশ সম্ভব হাত বুলিয়ে নিতেন। তিনি এরূপ তিনবার করতেন। [সহিহ বুখারি ৫০১৭]
এ সময় আয়াতুল কুরসিও পাঠ করতেন।

১৬। ঘুমানোর আগে অজু করা।রাসুল ﷺ বলেছেন, "যখন তুমি তোমার শয্যা গ্রহণের ইচ্ছা করবে, তখন সালাতের ন্যায় অজু করে ডান কাত হয়ে শয়ন করবে।" [বুখারি ও মুসলিম]

১৭। সাপ্তাহিক রোজা এবং আইয়্যামে বীজ।সপ্তাহের সোম, বৃহস্পতিবার এবং আইয়ামে বীজ অর্থাৎ চাঁদের ১৩,১৪,১৫ তারিখ রোজা রাখা। এটা রাসূল ﷺ এর নিয়মিত আমল।

১৮। আযানের জবাব দেওয়া এবং দুআ পড়া।বিশুদ্ধচিত্তে আযানের জবাব দিলে তা জান্নাতে নিয়ে যাবে। [বুখারি, মুসলিম]রাসুলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, "যে ব্যক্তি আজানের পর 'আল্লাহুম্মা রব্বা হা-যিহিদ...' এ দোয়াটি পাঠ করবে, তার জন্য আখিরাতে আমার সুপারিশ অবধারিত।" [সহিহ বুখারি ৬১৪]

১৯। দুআ করা।হাঁটতে, বসতে, চলতে সবসময় বেশি বেশি দুআ করা। কিছু দুআ আছে রাসুলুল্লাহ ﷺ সবসময় পড়তেন, এ ধরনের দুআ মুখস্ত করে বেশি বেশি পড়তে হবে।

২০। ইশরাক, চাশত, আওয়াবিন, এধরনের নফল নামাযগুলো পড়ার চেষ্টা করা।

২১। প্রতিদিন মেসওয়াক করা।

২২। টয়লেটে যাওয়া-আসায় দুআ পড়া।

২৩। শুক্রবারে সুরা কাহফ পড়া।

২৪। অযথা কথা বলা থেকে বিরত থাকা। এতে মিথ্যা বলা, গীবত-পরনিন্দা-অপবাদ ইত্যাদি হতে বেঁচে থাকা যাবে।

প্রতিদিন পালনীয় আরো অনেক আমল আছে। আমলগুলো নিয়মিত পালন করার চেষ্টা করি।সবসময় ইখলাস ও নিয়ত পরিশুদ্ধ করে ইবাদাত করার চেষ্টা করতে হবে। আজকে থেকে আমলগুলো থেকে পালন করার চেষ্টা শুরু করি।



0 Comments:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন